রবিবার ৩ আগস্ট ২০২৫ - ১৫:০৭
মানুষ এত স্বার্থপর কেন?

স্বার্থপরতা মানুষের স্বভাবগত দুর্বলতা, কিন্তু ইসলাম এ দুর্বলতাকে জিহাদের (আত্মসংগ্রামের) মাধ্যমে জয় করার নির্দেশ দিয়েছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, মানুষের মধ্যে স্বার্থপরতা একটি বহুল আলোচিত এবং আলোড়নসৃষ্টিকারী বৈশিষ্ট্য। আজকের সমাজে দেখা যায়, ব্যক্তি নিজের লাভ, আরাম, খ্যাতি ও সুবিধার জন্য অন্যের কষ্ট, অধিকার কিংবা বিপদকে উপেক্ষা করে। প্রশ্ন আসে—মানুষ এত স্বার্থপর কেন? এই স্বার্থপরতা কি মানুষের স্বভাবগত? ইসলাম এ বিষয়ে কী বলে? ইসলামের আলোকে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করাই এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য।

স্বার্থপরতা: মানব প্রকৃতি না আত্মার রোগ?

ইসলাম মানুষকে দুনিয়ার সেরা সৃষ্টি হিসেবে অভিহিত করেছে—

 "وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ"
“আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দিয়েছি।”
— (সুরা আল-ইসরা: ৭০)

তবে সেই মর্যাদার সঙ্গেই আসে দায়িত্ব ও পরীক্ষার বোধ। কুরআন স্পষ্ট করে বলে:

 "إِنَّ الْإِنسَانَ خُلِقَ هَلُوعًا، إِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ جَزُوعًا، وَإِذَا مَسَّهُ الْخَيْرُ مَنُوعًا"
“নিশ্চয়ই মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে অস্থির প্রকৃতির; বিপদ আসলে হতাশ হয়, আর সুখ পেলে কৃপণ হয়।”
— (সুরা আল-মা‘আরিজ: ১৯-২১)

অর্থাৎ, স্বার্থপরতা মানব স্বভাবের একটি দুর্বলতা, যা দমিত না করলে তা আত্মার রোগে পরিণত হয়।

স্বার্থপরতার কারণ ইসলামিক দৃষ্টিতে

১. আখিরাত ভুলে যাওয়া
যখন মানুষ দুনিয়াকে চূড়ান্ত মনে করে, তখন সে শুধুই নিজের আরাম, ক্ষমতা ও সম্পদ বাড়ানোর চিন্তা করে। অথচ আল্লাহ বলেন:

 "وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ"
“আখিরাতই শ্রেষ্ঠ এবং অধিক স্থায়ী।”
— (সুরা আল-আ‘লা: ১৭)

২. তাকওয়ার অভাব
আল্লাহভীতি এবং আত্ম-সংযম মানুষকে স্বার্থপরতা থেকে বিরত রাখে। একজন মুত্তাকি (পরহেযগার) জানে, সে যা করে সবকিছুর হিসাব দিতে হবে।

৩. সাহচর্য ও পরিবেশ
ইসলাম মানুষকে ভালো বন্ধু ও সহচর বেছে নিতে নির্দেশ দেয়। যদি কেউ এমন সমাজে বাস করে যেখানে লোভ, প্রতিযোগিতা ও স্বার্থপরতা প্রাধান্য পায়, সে সহজেই সেই পথে প্রভাবিত হয়।

৪. রুহানিয়াতের (আধ্যাত্মিকতা) ঘাটতি
নফস বা আত্মা যদি পরিশুদ্ধ না হয়, তবে মানুষ শুধু নিজের ইচ্ছার দাসে পরিণত হয়। 
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “সাবধান! প্রত্যেক দেহে একটি মাংসপিণ্ড আছে। যদি তা ভালো থাকে, তবে পুরো দেহ ভালো থাকে। আর যদি তা খারাপ হয়, তবে পুরো দেহ নষ্ট হয়ে যায়। সেটি হল—হৃদয়।”

ইসলামের আদর্শ: নিঃস্বার্থতা ও পরার্থপরতা

ইসলাম মানুষকে আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে বের হয়ে পরোপকারী হতে উৎসাহ দেয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: “তোমরা তখনই প্রকৃত মুসলিম হবে, যখন নিজের জন্য যা চাও, তা অন্য ভাইয়ের জন্যও চাও।”

জাকাত, সদকা, কোরবানি, মিসকিনের হক ইত্যাদি নির্দেশের মাধ্যমে ইসলাম সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও পারস্পরিক সহানুভূতির শিক্ষা দেয়।

স্বার্থপরতার প্রতিকার

১. আখিরাত স্মরণ করা
প্রতিদিন নিজেকে স্মরণ করাতে হবে: এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। চূড়ান্ত বিচার দিন আসবেই।
২. নফসের মোজাহাদা (সংগ্রাম)
নিজের স্বার্থকে দমন করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা।
৩. পরার্থপর আমল করা
দয়ালু হওয়া, গরিবের পাশে দাঁড়ানো, প্রতিবেশীর হক আদায় করা।
৪. ইসলামি জ্ঞান অর্জন ও আমল করা
যত বেশি দ্বীনের চেতনা অন্তরে প্রবেশ করবে, তত স্বার্থপরতা দূর হবে।

স্বার্থপরতা মানুষের স্বভাবগত দুর্বলতা, কিন্তু ইসলাম এ দুর্বলতাকে জিহাদের (আত্মসংগ্রামের) মাধ্যমে জয় করার নির্দেশ দিয়েছে। ইসলাম চায় একটি পরোপকারী সমাজ, যেখানে মানুষ একে অপরের সহযোগী হবে, শত্রু নয়। তাই আমাদের উচিত নিজেদের আত্মাকে শুদ্ধ করে, তাকওয়া ও আখিরাতের চেতনা নিয়ে সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখা।

"সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যে অন্যের জন্য উপকারে আসে।"
– (হাদিস)

রিপোর্ট: হাসান রেজা 

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha